কলকাতা: ২০১৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ। কলকাতা শহরে এ বছর বিভিন্ন আয়োজন ছিল বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও তার বিভিন্ন দিক নিয়ে। দুই দেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দুও ছিল কলকাতা।
বিদায়ী বছর শুরু হয় বাংলাদেশের শিল্পী ধীরাজ চৌধুরীর ৮০ বছর উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্পের মধ্যে দিয়ে। কলকাতা রোয়িং ক্লাবে ০১ জানুয়ারি ‘ধীরাজ ৮০’ ক্যাম্পে ২৫ জন সমকালীন শিল্পী চিত্রাঙ্কন করেন।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক যোগসূত্রের বড় অংশ বাংলা সাহিত্য। এর সূত্র ধরে কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার জকি আহাদ ০২ জানুয়ারি উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী খড়গপুর বইমেলার।
১৭ জানুয়ারি এক সময়ের ময়মনসিংহ জেলায় বসবাসকারীদের সংগঠন ‘ময়মনসিংহ প্রাক্তনী’র আয়োজনে বক্তব্য দেন উপ-হাইকমিশনার জকি আহাদ।
২৫ জানুয়ারি শুরু হয় ২০১৬ সালের কলকাতা বইমেলা। ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের উদ্বোধন ও ০২ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ দিবস’ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মঞ্জুরুল রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তাহমিনা বেগম, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান ।
৩১ জানুয়ারি প্রীতি ভলিবলে অংশ নেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি ) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)।
এ বছরই দুই বাংলায় একসঙ্গে মুক্তি পায় পরিচালক গৌতম ঘোষের ছবি ‘শঙ্খচিল’।
২১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
এদিনই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত ও নেপালের সরাসরি রেল ট্রানজিট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা এ অঞ্চলের বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
০৪ মার্চ শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবনের কাজ দেখেন উপ-হাইকমিশনারসহ চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
নারীদের ক্ষমতায়নের কথা মাথায় রেখে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উদ্যাপন করা হয় কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনে।
বিজিবি-বিএসএফের ‘সুন্দরবন মৈত্রী’ নামে প্রথম যৌথ মহড়া হয় ১২-১৪ মার্চ।
১৭ মার্চ কলকাতায় সম্মানের সঙ্গে উদ্যাপিত হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। বেকার হোস্টেলে মাল্যদানসহ নানা আয়োজন করে উপ-হাইকমিশন।
১৭ এপ্রিল কলকাতায় আয়োজিত হয় মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠান।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৫ সালে হওয়া সমুদ্র নৌ-বন্দর চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ এপ্রিল কলকাতা বন্দরে বাংলাদেশের জাহাজ এম ভি হারবার-১ নোঙর করে। কলকাতা ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়।
১৯ মে নির্বাচনে জিতে পশ্চিমবঙ্গে আবার ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিনই বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন থেকে ফুলের স্তবক ও অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে যায় মমতার বাড়িতে।
২৬ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঠান ইলিশ মাছ। মমতার হাতে এ মাছ তুলে দেন উপ-হাইকমিশনার জকি আহাদ। সেদিন প্রায় রাত ১১টার সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উপহার গ্রহণ করেন।
২৭ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পশ্চিমবঙ্গ সফরের আমন্ত্রণ জানান মমতা।
২০ জুন পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন ভবন ‘নবান্ন’-এ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী।০১ আগস্ট কলকাতা প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়াকে আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
০১ সেপ্টেম্বর কলকাতায় শুরু হয় ‘বাংলাদেশ বইমেলা’। ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কলকাতার রবীন্দ্র সদন-নন্দন চত্বরে এ বইমেলায় ব্যাপক জনসমাগম ঘটে।
বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাৎ দিবস উপলক্ষে কলকাতার বাংলা একাডেমিতে ১৭ আগস্ট আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: জীবন ও রাজনীতি’ শীর্ষক সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন।
২৩ আগস্ট উদ্বোধন করা হয় আকাশবাণী মৈত্রী পরিসেবার। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এ নতুন রেডিও চ্যানেলের উদ্বোধন করেন। দুই বাংলার বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে চ্যানেলটিতে।
শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর বিখ্যাত নন্দন মিউজিয়ামে ২৫ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় ‘ইনভিজিবল সিটিস’ শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্ট মেকিং বিভাগের অধ্যাপক শিল্পী রোকেয়া সুলতানার চিত্র প্রদর্শনী।
৫ দিনের বাংলাদেশের ‘বিজয় উৎসব-২০১৬’ আলোড়িত করে কলকাতার মানুষকে। ১৫-১৯ ডিসেম্বর সাফল্যের সঙ্গে চলে উৎসবের অনুষ্ঠানমালা।
সূত্র, বাংলানিউজ